নিজের মতের বিপক্ষে গেলেই কি শবে- বরাত সম্পর্কিত সহীহ হাদীস দূর্বল হয়ে যায়?

মতের বিপক্ষে গেলেই কি সহীহ হাদীস দূর্বল হয়ে যায়?
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবদ্দশায় প্রথম দিকে সাধারনত হাদীস লেখা নিষেধ ছিল। কারন তখন যদি হাদীস লিখে রাখা হত তাতে কুরআনের সঙ্গে হাদীসের সংমিশ্রনের আশংকা থাকত। হিজরী ১০০ সালের প্রারম্ভে প্রখ্যাত উমাইয়া খলীফা উমর বিন আব্দুল আযীয (রঃ) সরকারি পর্যায়ে হাদীস লিখার হুকুম জারী করেন। ইমাম মালিক (রঃ) এর সংকলিত ‘মুআত্যা’ প্রথম বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ। হিজরী তৃতীয় শতক হাদীস সংকলনের স্বর্ণযুগ। এ সময় ৬ টি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ সংকলিত হয়। এগুলোকে একত্রে ‘সিহাহ্ সিত্তাহ্’ বা ছয়টি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ নামে অভিহিত করা হয়। এ সকল হাদিসের কিতাব এবং সংকলকগণের নামঃ
১. সহীহ বুখারী ইমাম মুহাম্মাদ ইবন ইসমাইল (রঃ)
২. সহীহ মুসলিম ইমাম মুসলিম ইবন হাজ্জাজ (রঃ)
৩. সুনানে নাসাঈ আব্দুর রহমান ইবন শুআইব (রঃ)
৪. সুনানে আবু দাউদ ইমাম আবু দাউদ ও সুলাইমান ইবন আশআস (রঃ)
৫. জামি’তিরমিযী ইমাম ঈসা মুহাম্মাদ ইবন ঈসা তিরমিযী (রঃ)
৬. সুনানে ইবনে মাজাহ ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন ইয়াজিদ ইবন মাজাহ (রঃ)
অনেকেই আজ শবে বরাত নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সিহাহ সিত্তাহ হাদীস গ্রন্থ জামি’তিরমিযী ও সুনানে ইবনে মাজাহ এর হাদীসকে দুর্বল হাদীস রূপে বর্ননা করছেন।
আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন: এক রাতে আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে খুজে না পেয়ে তাকে খুজতে বের হলাম, আমি তাকে বাকী গোরস্তানে পেলাম। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন: ‘তুমি কি মনে কর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করবে?’ আমি বললাম: ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি ধারণা করেছিলাম যে আপনি আপনার অপর কোন স্ত্রীর নিকট চলে গেছেন। তখন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: ‘মহান আল্লাহ তা’লা শা’বানের মধ্য রাত্রিতে নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন এবং কালব গোত্রের ছাগলের পালের পশমের চেয়ে বেশী লোকদের ক্ষমা করেন।
হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বর্ণনা করেন (৬/২৩৮), তিরমিঝি তার সুনানে (২/১২১,১২২), বর্ণনা করে বলেন, এ হাদীসটিকে ইমাম বুখারী দুর্বল বলতে শুনেছি। অনুরূপভাবে হাদীসটি ইমাম ইবনে মাজাহ তার সুনানে (১/৪৪৪, হাদীস নং ১৩৮৯) বর্ণনা করেছেন।
ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ৬ লক্ষাধিক হাদীস থেকে বেছে বেছে ২৬০২ টি হাদীস বুখারী শরীফে লিপিবদ্ধ করেছেন। (এর মানে এটা নয় যে বাকী হাদীস গুলো মিথ্যা ছিল।) তিনি যে হাদীস গুলো বাদ দিয়েছিলেন সেগুলো যদি দুর্বল হয় তাহলে বুখারী শরীফ বাদে কোনো হাদীস গ্রন্থ সহীহ বলা হত না। কারন সেগুলোতে এমন কিছু হাদীস আছে যে গুলো বুখারী (রহঃ) কোনো কারনে বাদ দিয়েছিলেন।
সুতরাং শুধুমাত্র শবে বরাত কে না মানার জন্য একটা সহীহ হাদীস গ্রন্থের হাদীসকে দুর্বল বলা কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?

No comments:

Post a Comment